আবদুর রশিদ, গ্রাম: দক্ষিণ মামগ্রাম, উপজেলা: বাগমারা, জেলা: রাজশাহী
প্রশ্ন: বেগুন গাছের গোড়া পচে যাচ্ছে এবং গাছ মারা যাচ্ছে। এ অবস্থায় কি করণীয়?
উত্তর: স্কেলোরোসিয়াম রফসি নামক ছত্রাকের আক্রমণ হলে বেগুন গাছে এ ধরনের রোগ হয়ে থাকে। বেগুন গাছের যে কোন বয়সে এ রোগটি হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছ দেখা গেলে সাথে সাথে উঠিয়ে দূরবর্তী স্থানে মাটির নিচে পুঁতে ফেলা দরকার। আর অন্য বেগুন গাছগুলোতে মেনকোজেব ও কার্বেনডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম সঠিক নিয়মে মিশিয়ে আক্রান্ত বেগুন গাছে স্প্রে করলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
মো. মামুন, গ্রাম: দিয়ানা, উপজেলা: গোমস্তাপুর, জেলা: চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রশ্ন: মিষ্টিকুমড়ার পাতার সবুজ অংশ পোকায় খেয়ে ফেলছে। কি করলে প্রতিকার পাবো?
উত্তর: এ ধরনের সমস্যা কাটালে পোকা বা এপিল্যাকনা বিটল এর আক্রমণে হয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় হাত দিয়ে কীড়া ও ডিম সংগ্রহ করে ধ্বংস করা যেতে পারে। আক্রমণ অধিক হলে ম্যালাথিয়ন গ্রুপের ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে এ পোকা দমন করা যায়।
মো. মাহবুব উল্লাহ, গ্রাম: বাকতা, উপজেলা: ফুলবাড়িয়া, জেলা: ময়মনসিংহ
প্রশ্ন: নারকেলে এক ধরনের পোকার আক্রমণে নারকেলের খোসাতে বেশ শক্ত দাগ এবং ফাটাফাটা দাগ দেখা যায়। কি করণীয়?
উত্তর: এ সমস্যাটি মাকড়ের আক্রমণে হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে নারকেল বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি গাছে সুষম সার প্রয়োগ করা দরকার। এসবের পাশাপাশি এবামেকটিন গ্রুপের ১.২৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করলে এ ধরনের মাকড়ের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।
মো. রবিন, গ্রাম: পীড়ানচর, উপজেলা: শিবগঞ্জ, জেলা: চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রশ্ন: পটল গাছে এক ধরনের পোকার আক্রমণের কারণে পটলে ছিদ্র দেখা যাচ্ছে। আবার পটল পচেও ঝরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কি করবো?
উত্তর: জমিতে পড়ে থাকা পচা পটলগুলো সংগ্রহ করে দূরে সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি জমিকে পরিষ্কার রাখতে হবে। ক্ষেতের মাঝে ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করা যেতে পারে। সেজন্য প্রতি ২.৫ শতক জমিতে ১টি করে ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করতে হবে। এছাড়া ডেল্টামেথ্রিন গ্রপের যে কোন কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১মিলি মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে সুফল পাবেন।
নূরন্নবী হাওলাদার, গ্রাম: পদ্মনগর, উপজেলা: কুষ্টিয়া সদর, জেলা: কুষ্টিয়া
প্রশ্ন: লেবু গাছের পাতা সাদা হয়ে যাচ্ছে। পাতায় আঁকাবাকা গর্তের মতো দাগ দেখা যায়। কি করবো?
উত্তর: লেবু গাছে লিফ মাইনার নামক পোকার আক্রমণে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। অল্প পরিমাণ পাতা আক্রান্ত হলে পাতাগুলো ছাঁটাই করে দূরবর্তী জায়গায় মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। এ পোকার আক্রমণ শরৎকাল ও গ্রীষ্মকালে বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া ইমডাক্লোরপ্রিড গ্রুপের ০.২৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর লেবু গাছের কচি পাতায় ৩-৪ বার স্প্রে করলে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
শারমিন, গ্রাম: মৌতলা, উপজেলা: কালিগঞ্জ, জেলা: সাতক্ষীরা
প্রশ্ন: কামরাঙ্গা গাছের বাকল ও ডালে ছিদ্র দেখা যাচ্ছে এবং ছিদ্র থেকে ডালের গায়ে ঝুলে থাকা কাঠের গুড়া মতো দেখা যাচ্ছে। করণীয় কি?
উত্তর: এ সমস্যা মোকাবেলায় ডালে ঝুলে থাকা গুড়া মিশ্রিত মল পরিষ্কার করতে হবে। গর্তের মধ্যে কেরোসিন বা ন্যাপথেলিন দিয়ে ছিদ্রের মুখ বন্ধ করতে হবে। আর পোকায় খাওয়া বাকল চেছে কপারজাতীয় ছত্রাকনাশকের প্রলেপ দিতে হবে। এছাড়া কার্বোসালফানজাতীয় কীটনাশক ১০-১২ দিন পরপর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে। তবেই উপকার পাবেন।
রহিম শেখ, গ্রাম: কেরাদারি, উপজেলা: রাজারহাট, জেলা: কুড়িগ্রাম
প্রশ্ন: পানিকচুর পাতায় কালো ও হলুদ দাগ পড়ছে এবং কচুর কা- পচে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কি করবো?
উত্তর: ফাইটোফথোরা কলোকোসিয়া নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ দমনের জন্য রোগমুক্ত এলাকা থেকে সুস্থ বীজ সংগ্রহ করতে হবে। জমিতে রোগ দেখা গেলে ফেনামিডন ও মেনকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। এসবের সাথে সাথে ফসল সংগ্রহরে জমিতে পড়ে থাকা কচুর কা- ও পাতা ধ্বংস করে ফেলতে হবে। আর উল্লিখিত ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করলে এ রোগ দমন করা যায়।
আখতারুজ্জামান রুবেল, গ্রাম: লখাইডাঙ্গা, উপজেলা: মনিরামপুর, জেলা: যশোর
প্রশ্ন: মাছের ছত্রাকজনিত রোগের ক্ষেত্রে কি করণীয়?
উত্তর: রুইজাতীয় ও অন্যান্য চাষযোগ্য মাছে এবং মাছের ডিম আক্রান্ত হয়। ছত্রাকজনিত রোগের লক্ষণগুলো হলো-পুচ্ছ পাখনা, ময়লাবর্ণ তুলার ন্যায় ছত্রাক দেখা যায়। চামড়ায়, মাছের ডিম আক্রান্ত হয়ে সাদাটে হয়ে যায়। পানির ¯্রােত যখন স্থির হয় কিংবা বদ্ধ জলায় অথবা হ্যাচারি ট্যাংকে যেখানে অনিষিক্ত ডিমের ব্যাপক সমাগম ঘটে সেখানে ছত্রাক রোগ দ্রুত ছড়ায়। এছাড়া প্রাকৃতিক জলাশয়ের প্রায় শতকরা ৯৮ ভাগ ডিম এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সমস্যা রোধে-হ্যাচারির প্রতিটি যন্ত্রপাতি ও ট্যাংক সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করার পর শতকরা ১০ ভাগ ফরমালিন পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে। অনিষিক্ত ও মৃত ডিমগুলোকে দ্রুত হ্যাচারি থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। হ্যাচারিতে অধিক খাদ্য প্রয়োগ না করা। এসবের পাশাপাশি হ্যাচারিতে পালনকৃত ডিমগুলো ২৫০ পিপিএম ফরমালিন দিয়ে ধৌত করা। খাঁচা ও পেনে চাষকৃত আক্রান্ত মাছগুলোকে শতকরা ৩-৫ ভাগ ফরমালিন দিয়ে ২-৩ মিনিটের মতো গোসল করানো। আর বিকল্প হিসেবে শতকরা ৫ ভাগ লবণ পানিতে আক্রান্ত মাছগুলোকে গোসল করানো।
মো. মকবুল হোসেন, গ্রাম: যাদপপুর, উপজেলা: আলমডাঙ্গা, জেলা: চুয়াডাঙ্গা
প্রশ্ন: মাছের আইশ উঠে যাচ্ছে কি করবো?
উত্তর: এ সমস্যাটি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। এ রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে- মাছের আইশের গোড়ায় রস জমে আইশ ঢিলা হয়ে যায়। চামড়া উজ্জ্বলতা হারায় এবং মাছ অলসভাবে চলাফেরা করে। এ সমস্যার প্রতিকারে-চুন বা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পুকুর শোধন করতে হবে। এক কেজি ওজনের মাছে ১০ মিলিগ্রাম হারে সপ্তাহে ২ বার ক্লোরোমাইসন ইনজেকশন দিতে হবে। আর ১ লিটার পানিতে ২০ মিলিগ্রাম ক্লোরোমাইসন মিশিয়ে প্রতি ৪ দিন পর পর ২৪ ঘণ্টা মাছকে রাখতে হবে। তবেই মাছের ব্যাকটেরিয়াজনিত এ সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
আবদুল্লাহ সরকার, গ্রাম: সারানপুর, উপজেলা: গোদাগাড়ী, জেলা: রাজশাহী
প্রশ্ন: বাছুরের বয়স ২৫ দিন। দুর্গন্ধযুক্ত ও সাদা পাতালা পায়খানা হচ্ছে। এ অবস্থায় আমি কি করবো? পরামর্শ চাই।
উত্তর: বাছুরের সাদা উদরাময় রোগ হয়েছে। বাছুরকে সালফাডিন এস ভেট অথবা কট্টিম ভেট বোলাস খাওয়াতে হবে। এর সাথে ইলেকট্রোমিন অথবা রেনালাইট পাউডার খাওয়াতে হবে। এছাড়া বাছুরের খাবার পাত্র, পানির পাত্র প্রতিবার ব্যবহারের পর পরিষ্কার করতে হবে। তাহলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।
নূরে আলম তালুকদার, গ্রাম: ব্রাহ্মণগাঁ, উপজেলা: গৌরনদী, জেলা: বরিশাল
প্রশ্ন: আমার ব্রয়লার মুরগি আছে ৫০০টি। হঠাৎ করে স্ট্রোক করে মারা যাচ্ছে। এর সমাধান কি?
উত্তর: শেডে ফ্যান দিতে হবে। টিনের উপর বস্তা বা চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং ১ ঘণ্টা পর পর পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। পানির সাথে সিভিট ভেট ও ইলেকট্রোমিন পাউডার দিতে হবে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি উপকার পাবেন।
কৃষির যে কোন প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন আমাদের কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ এ নাম্বারে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে। তাছাড়া কৃষিকথার গ্রাহক হতে বার্ষিক ডাক মাশুলসহ ৫০ টাকা মানি অর্ডারের মাধ্যমে পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫ এ ঠিকানায় পাঠিয়ে ১ বছরের জন্য গ্রাহক হতে পারেন। প্রতি বাংলা মাসের প্রথম দিকে কৃষিকথা পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়।
কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন*
*উপপ্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫ : taufiquedae25@gmail.com